শুক্রবার, জুন ১৪, ২০১৯

পোস্ট #০৩৮ : বোনেরা আবার বাংলায়... #তৃতীয় পর্ব


*** শুরুর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ***

বেশ কয়েকমাস যাবত দেখছি, অনেকেই চিত্রচোর সহ গুটিকয়েক অন্যান্য বাংলা অনুবাদ ও পুরানো দুষ্প্রাপ্য কমিক্স ব্লগ থেকে বিভিন্ন কন্টেন্ট “শুধুমাত্র এক স্থানে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে” অবাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন স্থানে আমাদের না জানিয়েই শেয়ার করছেন, তার মধ্যে একাংশ আবার বিভিন্ন এড প্রদর্শনের মাধ্যমে আমাদের কন্টেন্ট ডাউনলোড করে অন্য ড্রাইভ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা লিঙ্ক থেকে শেয়ার করছেন। অনেকে অজ্ঞতাবশত কাজটি করেছিলেন এবং পরবর্তীতে সেটি শুধরেও নেন, তাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু বাকি বেশ কিছু ব্লগের ব্লগারদের এ বিষয়ে মেইল করলেও কোনও প্রত্যুত্তর আসেনি (যদিও ব্লগে লেখা ছিল, কোনও কন্টেন্ট মোছার প্রয়োজন হলে মেইলে জানাতে)। এটি একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা বলে মনে করি। আমার মতে, শুধু কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনটুকুই সব নয়, তাই ভবিষ্যতে কেউ যদি চিত্রচোরের কোনও কমিক্স শেয়ার করতে চান, সেটা আমাদের জানিয়ে, পোস্টের মূল লিঙ্কটি শেয়ার করুন, কোনও অন্য লিঙ্ক বা শুধু ডাউনলোড লিঙ্ক শেয়ার করাটা অনুচিত। আশা করি, চিত্রচোরের বাকি পাঠকেরাও এই ধরনের কোনও পোস্ট অন্য কোনও স্থানে দেখে থাকলে আমাদের জানাবেন ও সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন, নাহলে হয়তো অতীতে বাংলার বিখ্যাত কিছু ব্লগারদের মতোই আমরাও চিত্রচোর ব্লগটিকে চিরতরে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব। অনেক ধন্যবাদ।

গত দুই পর্ব ধরে চলছে জেফ স্মিথের বোন


এই কমিক্সটি অনুবাদ করছেন আমাদের সবার প্রিয় ইন্দ্রনীল’দা। অনেকে নতুন এই মজার কমিক্স কেমন লাগছে, তা ইতিমধ্যে কমেন্টে জানিয়েছেন। গত পর্বটি কেমন লেগেছে আমাদের জানান, আর এই ফাঁকে আজকে বোনেদের স্রষ্টা ও বোন সৃষ্টির নেপথ্যের কিছু ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেই...

বোনেদের স্রষ্টা ও বোন সৃষ্টির নেপথ্যের কিছু তথ্যাবলি :

বোন সিরিজের ইংরেজি #৩ নং এর প্রচ্ছদ

জেফ স্মিথ একবার জানিয়েছিলেন, পাঁচ বছর বয়েসে তিনি লিভিংরুমে বসে ছবি আঁকছিলেন, তিনি যেটা এঁকেছিলেন সেটা দেখতে অনেকটা টি-শেপের পুরানো টেলিফোন হ্যান্ডসেট রিসিভার, সেটার থেকেই বের হচ্ছে একটা ভ্রূ কোঁচকানো এক চরিত্র, যার ইয়াব্বড় একটা হাঁ করা মুখ। চরিত্রটির হাবভাব ও বৈশিষ্ট্য থেকেই ফোন বোনের তুতোভাই খিট্‌খিটে ফোনি বোনের সৃষ্টি হয়েছিল। ডন মার্টিনের ম্যাড ম্যাগাজিন স্ট্রিপে বহুল ব্যবহৃত এক বর্গীয় পদবী “ফোনবোন” থেকেই ফোনের এই নামকরণ করেন স্মিথ। স্মিথ ১৯৭০ এর শুরুর দিকে প্রথম বোনের চরিত্রগুলির ওপর কাজ শুরু করেছিলেন, তখন ওনার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর।

স্মিথের পছন্দের বই “মবি ডিক”-ও বোনের অনুপ্রেরণার কাজ করেছে, স্মিথের বহু-স্তরের বিবরণী ও সংখ্যাতত্ত্ব তাঁর বোনের বিভিন্ন কমিক্সের মধ্যে দিয়ে বর্ণনা করেছেন। বোন কমিক্সের গল্পের ধাঁচ বোঝাতে তিনি অন্যতম সেরা শিশুসাহিত্য “হাকলবেরি ফিন”-এর কথাও বলেছেন, ওঁনার মতে, “হাকলবেরি ফিনের মতো গল্পগুলো আমাকে টানে, যেসব গল্প শুরুতে বেশ সাধারণভাবেই শুরু হয়, যেন ছোটদের গল্প... কিন্তু ক্রমে গল্প যত এগোতে থাকে, গল্পের ঘটনাগুলো আরও একটু একটু করে গাঢ় হতে থাকে, গল্পের থিম আরও বাস্তবধর্মী ও জটিল হতে শুরু করে— এই ধরনের কাহিনীগুলোই আমাকে এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগায়।” এছাড়াও মূল স্টার ওয়ার্স ট্রিলজি, জে. আর. আর. টলকিনের লর্ড অফ দ্য রিংস আর বিভিন্ন ক্লাসিক রূপকথা ও পৌরাণিক কাহিনীসমূহ বোনের অনুপ্রেরণার কাজ করেছে।

ওহিও ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন, তিনি দ্য ল্যান্টার্ন নামের এক স্টুডেন্ট নিউজপেপারের জন্য “থর্ন” নামের একটি কমিক স্ট্রিপ রচনা করেন, যে চরিত্রটিকে আমরা বোনে পরবর্তীতে দেখেছি।

বোন সিরিজের বাংলা #৩ নং এর প্রচ্ছদ

১৯৯১ সালে স্মিথ নিজের কার্টুন সিরিজের প্রকাশের জন্য কার্টুন বুকস নামের একটি প্রকাশনা কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে স্মিথ নিজেই সেলফ পাবলিশিং শুরু করেন, অর্থাৎ তাঁকে অর্থলগ্নি থেকে শুরু করে বণ্টন, চিঠিপত্রের উত্তর দেওয়া, সব ধরনের গ্রাফিক্সের ও লেটারিঙের কাজ (যেগুলো উনি নিজের হাতে করতেন), সব কিছু ছাপতে পাঠানো, সব অর্ডার নেওয়া ইত্যাদি সব কিছুই একা হাতে সামলাতে হত, এতে লেখা আর ছবি আঁকার জন্য ফোকাস করতে বেশ অসুবিধায় পড়েন, যার জন্য প্রোডাকশনের কাজ পিছিয়ে যেতে থাকে। তাই তিনি ওঁনার স্ত্রী বিজয়া আইয়ারকে সিলিকন ভ্যালির ভালো চাকরির থেকে ইস্তফা দিয়ে ওনাকে কার্টুন বুকস-এর প্রেসিডেন্টের পদে বসে তাঁকে সাহায্য করার প্রস্তাব দেন। ফলস্বরূপ স্মিথ আবার নিজের কাজে মন দিতে পারেন আর বিক্রি আরও বেড়ে যায়।

১৯৯৫ সালে ইমেজ কমিক্সের থেকে বোন ছাপতে শুরু করেন। ক্যাটালগে বইগুলোর স্থান দেওয়ার জন্য এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা ছিল, কালেক্টেড ভলিউমগুলো তখনো কার্টুন বুকস থেকেই প্রকাশিত হত। ইমেজে প্রকাশের সময় প্রথম ২৭টি ইস্যু আবার নতুন প্রচ্ছদ সমেত নতুন করে প্রকাশিত হয়, সেইগুলোর ওপরের বাঁ দিকের কর্নারে থাকত ইমেজ কমিক্সের স্বতন্ত্র লোগো। কার্টুন বুকসের তরফ থেকে বেরনো বইগুলোর ব্যাক কভার কালো রঙের থাকত, সেই সাথে ভেতরের কোনও এক প্যানেল ইনসেটে দেওয়া হত। পরের দিকের বইগুলোতে প্রচ্ছদের লোগোর রঙ পরিবর্তন করা হয়। ২০০৪ এর জুন মাসে ৫৫ নম্বর সংখ্যায় কমিক্সটির সমাপ্তি ঘটে, সেই সংখ্যার ব্যাক কভারে ভেতরের কোনও কমিক প্যানেলের বদলে ১০ই মে স্মিথের হাতে আঁকা কমিক্সটির শেষ পাতাটি ধরা অবস্থায় স্মিথের একটি সাদাকালো ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে একটা ইন্টারভিউতে স্মিথ জানান যে উনি প্রথম সংখ্যায় কাজ করার আগেই, তিনি শেষ পাতাটি এঁকেছিলেন। ৫৫টি ইস্যু পরবর্তীকালে সংগ্রহ আকারে একেকটি ভলিউমে প্রকাশ পায়।

নিচে সেগুলোর একটি সম্পূর্ণ তালিকা দেওয়া হলো :

নং নাম সাদাকালো সংস্করণ রঙিন সংস্করণ
আউট ফ্রম বোনভিল (প্রথমে দ্য কমপ্লিট বোন অ্যাডভেঞ্চার্স ভলিউম ১ নাম দিয়ে প্রকাশিত হয়) ১৯৯৫ ২০০৫
দ্য গ্রেট কাউ রেস (প্রথমে দ্য কমপ্লিট বোন অ্যাডভেঞ্চার্স ভলিউম ২ নাম দিয়ে প্রকাশিত হয়) ১৯৯৫ ২০০৫
আইস অব দ্য স্টর্ম (প্রথমে দ্য কমপ্লিট বোন অ্যাডভেঞ্চার্স ভলিউম ৩ নাম দিয়ে প্রকাশিত হয়, ২০ নং সংখ্যাটি বাদ দিয়ে) ১৯৯৬ ২০০৬
দ্য ড্রাগনস্লেয়ার ১৯৯৭ ২০০৬
রক জ : মাস্টার অব দ্য ইস্টার্ন বর্ডার ১৯৯৮ ২০০৭
ওল্ড ম্যানস কেভ ১৯৯৯ ২০০৭
ঘোস্ট সার্কেলস্‌ ২০০১ ২০০৮
ট্রেজার হান্টারস্‌ ২০০২ ২০০৮
ক্রাউন অব হর্নস্‌ ২০০৪ ২০০৯

আজ এই পর্যন্তই, পরবর্তী পোস্টে স্বাদবদল হবে... আপাতত আজকে বোনের তৃতীয় পর্ব পড়তে থাকুন।


গত এক পর্বে ডাউনলোড অপশন তুলে দেওয়ায় অনেকে আক্ষেপ করেছিলেন, তাদের কথা মাথায় রেখেই আবার ডাউনলোড অপশন চালু করা হলো। কমিক্সটি পড়ার পর আপনার মতামত একান্ত কাম্য।

অনুবাদ : ইন্দ্রনীল কাঞ্জিলাল
প্রচ্ছদপট রূপান্তর ও বর্ণ সংস্থাপন : রূপক ঘোষ

আগামী পর্বে বোনের তিন পর্বের মধ্যান্তরে রিপ কার্বি চিত্রচোরে আসবেন...