মঙ্গলবার, জানুয়ারী ২৩, ২০১৮

পোস্ট #০৩৫ : ব্যাটম্যান : উত্থানের আগে...


মূল ইংরেজি সংস্করণের প্রচ্ছদ
আজ ২৩ শে জানুয়ারি, আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রনায়ক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী। এই শুভদিনে চিত্রচোরে আবার উপস্থিত হয়েছেন ব্যাটম্যান। আজ থেকে বছর দুয়েক আগেই তাকে দিয়েই শুরু হয়েছিল আমাদের পথচলা। ২০১৬ সালে “কিলিং জোকের” বঙ্গানুবাদ “খুনে কৌতুক” ডিজিটাল চিত্রচোর সংস্করণ থেকেই শুরু হয়েছিল আমাদের চিত্রচোরের অনুবাদ কমিক্স এর মজা। মাঝে দেখতে দেখতে দুটি বছর পেরিয়ে গেছে, অনেক পাঠকেরা আমাকে জানিয়েছিলেন আবার ব্যাটম্যান কবে আসবে, উত্তর দিয়েছিলাম কাজ চলছে, খুব তাড়াতাড়ি আবার হবে ব্যাটম্যানের উত্থান। ব্যাটম্যানকে নিয়ে বড় কিছু করার ইচ্ছা ছিল, তাই এ বছর ব্যাটম্যানকে নিয়ে অনেকগুলো পোস্ট করার ইচ্ছে আছে। আপনারা আরও নতুনভাবে তার শুরুর দিকের ঘটনার সাক্ষী হবেন।

ব্যাটম্যান আমার খুব পছন্দের একটা চরিত্র। ব্যাটম্যান সেই সাধারণ মানুষ, যিনি সাংঘাতিক সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে হেরে যাওয়া বাজি জিতে যান, একজন সাধারণ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও এই উন্মত্ত সমাজের দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিঃসঙ্কোচে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি ভয়কে জয় করেছেন, হয়তো ভয় বস্তুটাও এখন তাকেই ভয় পায়। ব্যাটম্যানের বিখ্যাত চিত্রোপন্যাসগুলো পড়লে আপনারও এরকম ধারণা আসতে পারে, কাহিনীগুলো এতটাই অনুপ্রেরণা যোগায়। আসলে চরিত্রটির মধ্যে এত স্তর আছে, সেটা প্রাপ্তমনস্ক পাঠকেরা যথার্থ ধরতে পারবেন। সেই জন্যই হয়তো ব্যাটম্যান আর সব চরিত্রদের থেকে আলাদা। তিনি নিছক একটা কাল্পনিক চরিত্র হয়েও আমাদের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন, যেন তিনি আমাদের মাথার ওপরে কোনও বিশাল ইমারতের কার্নিশে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে সবার অগোচরে সবকিছু ঈশ্বরের মতো দেখছেন আর অপেক্ষা করছেন, কোনও অশুভ ইঙ্গিত দেখলেই রাতের বুক চিরে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদ

আজকের আমাদের দেশে দুর্নীতির ফলে সমাজের যা করুণ পরিণতি, তাতে মনে হয় সত্যিই যদি কেউ ব্যাটম্যানের মতো থাকতো তাহলে হয়তো দেশটার কিছু পরিবর্তন আসতো। তেমনি যদি আজ নেতাজির মতো মানুষ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ভারতবর্ষে থাকতেন, তাহলেও হয়তো আজকের এরকম অবস্থা হতো না, সেই কথা স্মরণ করেই এই বিশেষ দিনটিতে আবার ব্যাটম্যানকে ফিরিয়ে আনলাম।

যাই হোক এবার একটু গল্পটির সামান্য কিছু তথ্যের দিকে নজর দেওয়া যাক :

আজকের কমিক্সটি আমরা নিয়েছি ১৯৯০ সালে প্রকাশিত "সিক্রেট অরিজিনস্‌" গ্রাফিক"দ্য ম্যান হু ফলস্‌" থেকে। যেটি অন্যান্য অনেকগুলি কমিক্সের মতোই ক্রিস্টোফার নোলানের "ডার্ক নাইট ট্রিলজি" -র চিত্রনাট্যের রেফারেন্স হিসেবে কাজ করেছিলো নভেলের প্রকাশিত ব্যাটম্যানের এই নতুন গল্পটি।

বইটির পশ্চাৎ প্রচ্ছদের আকর্ষণ
১৯৮৭ সালে ফ্র্যাঙ্ক মিলার ও ডেভিড মাজ্জুচ্চেলির ব্যাটম্যানঃ ইয়ার ওয়ান থেকে আধুনিক যুগের (মডার্ণ এজ) ব্যাটম্যান এর সূচনা হয়, ইয়ার ওয়ানে দর্শিত কাহিনীতে ব্রুস ওয়েন ১২ বছর বাদে তার নিজের শহর গথামে ফিরে এলেন, এবং কলুষিত গথামকে এক নতুন উপায়ের পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু করলেন, হয়ে উঠলেন ব্যাটম্যান। কিন্তু সেখানেও বাকি থেকে গিয়েছিল বেশ কিছু প্রশ্নের, যেমন :

০১। কিভাবে পিতা মাতার মৃত্যুর পর ব্রুস  এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন?
০২। তিনি কোথা থেকে এবং কি কি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এই দীর্ঘ বারো বছর সময়ে?
০৩। কেন বাদুড় বা ব্যাটকেই তিনি বেছে নিলেন তার এই নতুন স্বত্বার স্মারক চিহ্ন রূপে?

উপরোক্ত সব প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে পড়তে হবে ব্যাটম্যান -এর "গোপন সূত্রপাত" কমিকসটি।

বিঃ দ্রঃ এই বিষয়ের ইতিহাস নিয়ে আরও বিস্তারিত লেখা পাওয়া যাবে কমিকসটির ভেতরের "অনুবাদকের পাতা" থেকে।

পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন


আগামী পোস্টে আপনারা পড়বেন "ব্যাটম্যানঃ প্রথম বর্ষ" -এর প্রথম সংখ্যা।

পুনশ্চঃ সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে শেষের আগে কিছু কথা জানিয়ে রাখতে চাই।এই অনুবাদের কাজটা মোটেই তেমন সহজ কাজ নয়। একটা কমিকসকে আদ্য-পান্ত বাংলায় করতে গেলে অনুবাদের পাশাপাশি ছবিগুলোর ওপরের গ্রাফিক্স মুছে আবার বেশ কিছু রূপান্তর করতে হয়, সেটা আরও বেশি সময়সাপেক্ষ কাজ। গড়ে একটা ছোট কমিক্স অনুবাদ করতে যদি সপ্তাহ তিনেক সময় লাগে, আর দিনে যদি চার ঘণ্টা এর পেছনে ব্যয় করা হয় তবে সর্বমোট সময় দাঁড়াচ্ছে চুরাশি ঘণ্টা, কম বেশি করে ধরে নিলাম একটা সাধারণ কমিক্সের বাংলা সংস্করণ করতে সময় লাগছে সত্তর ঘণ্টা। তারপরে সেটার প্রুফ রিড এবং সম্পাদকের সময় এবং সেটির ভুলত্রুটি শোধরানোর জন্যও বেশ কিছু সময় যাচ্ছে। প্রতিবারেই আমাদের এই অতি তুচ্ছ কাজটাকে বিনামূল্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুধু পাঠকদের কাছে একটাই অনুরোধ থাকে, তাদের মূল্যবান সময়ের মিনিট দু'য়েক সময় খরচ করে, ভালো-মন্দ মতামত জানিয়ে এবং কমিকসের অনুবাদের মান কেমন হচ্ছে তা জানিয়ে আমাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগানো। বলা বাহুল্য বেশ কিছু পোস্টের ফাইলটি ডাউনলোডের সংখ্যা ৬৫০+ অতিক্রম করলেও ১০-১২র বেশি মন্তব্য পড়ছে না, যা খুবই হতাশাজনক এবং এই কারণে চিত্রচোর ব্লগে বিদেশি কমিক্স নিজের মাতৃভাষায় পড়ার আনন্দ দানের উদ্দেশ্য থেকে কোনোরূপ বাধা না দিয়েই সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডাউনলোড অপশান তুলে দেওয়া হলো। আপনারা এবার থেকে আরো উন্নত পদ্ধতিতে অনলাইন গুগল ড্রাইভের লিঙ্কে নির্দ্বিধায় পড়তে পারবেন নতুন সব কমিকস। গুগল একাউন্ট থেকে লগ ইন করা থাক বা না থাক সেটা পড়তে কোনও সমস্যা হবে না। পাশে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

অনুবাদ ও প্রচ্ছদপট রূপান্তর : রূপক ঘোষ
অনুবাদের মান উন্নয়ন, সম্পাদনা ও বিশেষ সহায়তা : ইন্দ্রনীল কাঞ্জিলাল
প্রুফ রিডিং : মোঃ আশিকুর রহমান

সোমবার, জানুয়ারী ০১, ২০১৮

পোস্ট #০৩৪ : বিগল বয়েজদের আগমন - জলদস্যুর শেষ বংশধর


শুরুতেই সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। আজ চিত্রচোরে হাজির হয়েছে বিগল বয়েজ

মূল ইংরেজি সংস্করণের প্রচ্ছদ

ডিজনির সৃষ্ট অমর কার্টুন চরিত্র “ডোনাল্ড ডাক”কে চেনে না, এরকম মানুষের সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা হবে। সেই ডোনাল্ডের তিন ভাইপোকে মনে আছে নিশ্চয়ই? হিউই, ডিউই আর লুই। আমাদের ছোটবেলায় একটা খুব জনপ্রিয় কার্টুন সিরিজ হত “ডাকটেলস” বলে, সেটার কথা এক ঝলক মনে পড়ছে কি? ডাকবার্গে থাকতেন স্ক্রুজ ম্যাকডাক নামের এক ধনকুবের ব্যবসায়ী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ডাক। তিনি ছিলেন সম্পর্কে ডোনাল্ডের মেসো। তাঁর সাথেই থাকত সেই তিন দস্যি ভাইপো। আর আঙ্কেল স্ক্রুজের টাকা চুরি করার নানা রকম ছক কষত “বিগল বয়েজ” নামের ডাকাত ভাইয়েরা। ডোনাল্ড ডাকের দুনিয়াতে আঙ্কেল স্ক্রুজ ছিলেন দুনিয়ার সবচেয়ে কোটিপতি ডাক, একাধারে তাঁর তেলের খনি, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় কয়লাখনির মালিক, এছাড়া অন্যান্য ব্যবসা তো আছেই!

এনার স্রষ্টা হলেন কার্ল বার্কস। ডিজনি স্টুডিও ও ওয়েস্টার্ন পাবলিশিং-এর সঙ্গে কাজ করার সময় তিনি ডাকবার্গসহ সেখানে বসবাসকারী অনেক চরিত্র সৃষ্টি করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, স্ক্রুজ ম্যাকডাক (১৯৪৭), বিগল বয়েজ (১৯৫১), গায়েরো গিয়ারল্যুজ (১৯৫২) প্রভৃতি। ১৯৫১ সালের নভেম্বর মাসে “ওয়াল্ট ডিজনি’স কমিক্স এন্ড স্টোরিজ” এর ১৩৪ নম্বর ইস্যুতে একটি দশ পাতার গল্পে প্রথম বিগল বয়েজদের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

বিগল ভাইদের সাথে লাকি লুকের দুনিয়ার ডাল্টন ভাইদের বেশ মিল আছে। সাধারণত গল্প অনুযায়ী বিগল বয়েজদের গ্যাং-এ তিন থেকে শুরু করে দশজন ভাইদের দেখা যায়। এই বিগল বয়েজের জীবনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আঙ্কেল স্ক্রুজের টাকা ডাকাতি করে নিজেদের বিলাসিতার পেছনে খরচ করা! কিন্তু কোনও না কোনও মজার উপায়ে তারা প্রতিবারেই ব্যর্থ হয়।

আজ আপনারা পড়বেন ২০১২তে ডিজনি কমিক্স থেকে প্রকাশিত বিগল বয়েজের নতুন এক অভিযান “The Last Pirate” এর বাংলা অনুবাদ “জলদস্যুর শেষ বংশধর”।

এটা আমার প্রথম অনুবাদ। তাই আশা করব, অনুবাদের ক্ষেত্রে আমার ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করে ভুলগুলো শোধরাতে সাহায্য করবেন।

বি. দ্র. : এই কমিক্সটি সব বয়সের পাঠকদের পড়ার উপযোগী। তাই নির্দ্বিধায় পড়ুন ও পড়ান। আর অনুবাদ কেমন লাগলো পড়ে জানাতে ভুলবেন না যেন!


আগামী পোস্টে ব্যাটম্যান আবার ফিরবে, শুধুমাত্র চিত্রচোর ব্লগে...

বাংলায় অনুবাদ ও প্রচ্ছদপট রূপায়ন : মোঃ আশিকুর রহমান